ভিয়েতনাম এক আশ্চর্য নাম বটে! ভিয়েতনাম বললেই মনের গভীর থেকে উঠে আসে এক মরণপণ সংগ্রামের স্মৃতি, তার বিজয়ের কথা। বিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগের শুরুর পর্বে দু'দশক সে দেশের মানুষ যে কাজটা করেছে তা শুধু ভিয়েতনামবাসীর গর্ব নয়, মানব সভ্যতার অহঙ্কার। নিজের ক্ষুদ্র শক্তিকে হাতিয়ার করে, রাজনৈতিক চেতনার আলোকে উদ্দীপ্ত সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই ধূলিসাৎ করে দিয়েছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রবল পরাক্রান্তের সামরিক অহঙ্কার। কি করে! তা নিয়ে গোটা দুনিয়া জুড়ে আজও গবেষণা চলছে। মার্কিন প্রশাসনও তাদের সেই পরাজয়ের স্মৃতি ভুলতে পারে নি; তার কারণ-অনুসন্ধানের কাজ তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছে, আজকের তারিখেও। তবে শুধু প্রতিস্পর্ধী লড়াই নয়, ভিয়েতনাম সেই লড়াইয়ের ময়দানে উন্নত নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ার কাজও করেছে। মুক্তির জন্য, প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য সাধারণ মানুষ কী করতে পারে, সেই কল্পলোকের বাস্তবকথা ধারণ করার লক্ষ্যেই দু'মলাটের আধারে লেখক অনিরুদ্ধ চক্রবর্তীর ইতিহাস-যাপন। তিনি নিজে সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত অন্যতম সেরা সাহিত্য পত্রিকা 'নন্দন'-এর সম্পাদক; সাংবাদিকতার সাথেও যুক্ত ছিলেন অনেক দিন। ফলে, একটা ক্ষুদ্র পরিসরে ভিয়েতনাম বিপ্লবের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচিতি ঘটানোর লক্ষ্যে এ বই হলেও লেখার গুণে, আদর্শের আবেদনে তার অনুরণন ব্যাপক। সাধারণ পাঠক তো বটেই, আজকের দুনিয়ায় যাঁরা বুঝতে চান না মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আসল রূপ ঠিক কী, তার বিরুদ্ধে মানুষের পাল্টা প্রতিরোধের চেহারাটাও ঠিক কী রকম হয়, তাঁদের কাছে এ বই আবশ্যিক পাঠ; কেননা তাদের তো জানা দরকার, তাঁদের এই না বুঝতে চাওয়ার তাৎপর্যটা ঠিক কী!