সম্যক বিচারে ভারতীয় দর্শনের আলোচনা সুদীর্ঘ এবং বিতর্কপূর্ণ। প্রাচীন ভারতের সমাজ-ইতিহাস এখনও বহুলাংশে গবেষণা-সাপেক্ষ। ফলে, ঠিক কোন কারণে ও কিসের প্রভাবে এ দেশে সুপ্রাচীন অতীতেই এতো বিচিত্র দার্শনিক মতের সূত্রপাত হয়েছিল - এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর আমাদের কাছে এখনও অধরা। তবে, ভারতীয় দর্শনের বিকাশ যেহেতু প্রায় একান্তভাবেই সম্প্রদায়গত, এবং যেহেতু কোনো এক সুদূর অতীতেই এই সম্প্রদায়গুলির সূত্রপাত, তাই ভারতীয় দর্শন মূলগতভাবে বহু প্রাচীন ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস এবং পৌরাণিক কল্পনা। আরও একটা বিষয় হলো, ভারতীয় দার্শনিকরা সুউন্নত দার্শনিকতার স্তরে উপনীত হওয়ার পরেও, তাঁদের মনের কোণায় এইসব সাবেকি বিশ্বাস ও কল্পনাকে সহ্য করে নিয়েছিলেন, বা সেগুলিকে বর্জন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতনভাবেই অনুৎসাহিত ছিলেন। ফলে, সব মিলিয়ে হয়ে দাঁড়ালো, যুক্তিমূলক ও বহুলাংশে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সাথে অনেক আদিম বিশ্বাসের সম্মিলন। পাশাপাশি, নানান সম্প্রদায়ের মধ্যে মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মাধ্যমে ভারতীয় দর্শন ঐতিহাসিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই সমস্ত আলোচনাকেই ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আলোকে দু'মলাটের মধ্যে ধরার চেষ্টা করেছেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়; যাঁর পরিচয়, বিশ্ববন্দিত মার্কসীয় তত্ত্ববিদ, প্রাচীন ভারতের এক অভিনব ভাষ্যকার এবং সর্বোপরি একজন দার্শনিক। আজকের ভারতে ভারতীয় দর্শনকে ধর্মান্ধ রাজনীতি তথা ধর্ম-ব্যবসায়ীদের হাতে অপব্যাখ্যাত হতে হচ্ছে, দেবীপ্রসাদের এই বই তাকে চ্যালেঞ্জ করে।