'জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য চিত্তভাবনাহীন'। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা অকুতোভয়ে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের উদাহরণ রেখে গেছেন। সেদিন বিশেষত যে যুবসমাজ মরণপণ লড়াইয়ের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম সুধাংশু দাশগুপ্ত। ১৯২৯ সালে মেছুয়াবাজার বোমার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, যশোর জেল, ঢাকা জেলে বেশ কিছুদিন আটক থাকার পর আন্দামান জেলে দ্বীপান্তরিত হন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ চেয়েছিল সুধাংশু দাশগুপ্তের মতো বলিষ্ঠ যুবকদের পায়ে ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে জেল গরাদে আটকে তাঁদের মনোবলকে দুরমুশ করে দিতে। কিন্তু কার্যত হয়েছিল উল্টো। জেলপর্বেই তাঁরা অগ্রজ বন্দিদের সান্নিধ্যে এসে রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চা করার সুযোগ পেলেন। এঁদের একটা বড়ো অংশ জেলখানাতেই কমিউনিস্ট মতাদর্শে দীক্ষিত হলেন। বিশেষত স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গদেশের রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল দেখা দিয়েছিল। এমনিতে জাতীয় কংগ্রেসের বামপন্থী অংশই বঙ্গদেশে বরাবর শক্তিশালী ছিলেন। পরবর্তীকালে, কমিউনিস্ট আন্দোলন এর পাশাপাশি মানুষের মনে আরো বেশি শ্রদ্ধার জায়গা তৈরি করে নিয়েছিল যখন সাধারণ মানুষ দেখলেন আন্দামান ফেরত বিপ্লবীদের একটা বড়ো অংশ জেল থেকে বেরিয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। সুধাংশু দাশগুপ্ত'র লেখা এই বইয়ে যে কারাপর্বে উত্তরণের কাহিনি বিধৃত- যা পড়লে জানা যায় কোন বিপ্লবী ঐতিহ্যের ধারক আজকের বাম আন্দোলন।