মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস 'পুতুল নাচের ইতিকথা' বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা সাহিত্যকীর্তি বলে বিবেচিত। পরাধীন ভারতে গ্রামবাংলার বিষাদগ্রস্ত ও হতভাগ্য দশা, যার কারণ ছিল মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণায় গ্রামীন মানুষের যাপিত জীবন, এবং সেই জীবনের হাল বদলাতে এক শহর-ফেরৎ ডাক্তারের লড়াই - এই উপন্যাসের মূল বক্তব্য। ১৯৩০ দশকের প্রথম ভাগের গ্রামীন সামাজিক জীবনের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র 'শশী ডাক্তার' শহরের আধুনিক জীবনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করা সত্ত্বেও, তাঁর গ্রামে ফিরে এসেছিল গ্রামের মানুষের প্রতি সেবার মানসিকতা নিয়ে। সেখানে সে জড়িয়ে পড়ে গ্রামবাংলার সামাজিক জীবনের শিরা-উপশিরায় মিশে থাকা কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে। তাঁর বৈজ্ঞানিক চেতনা নিয়ে সে রুখে দাঁড়ায় বিমূর্ত সমাজের মানসিক ব্যাধির বিরুদ্ধে; তাঁর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়, একদিকে, গ্রামের যামিনী কবিরাজ ও তাঁর বাবা ধনী ব্যবসায়ী গোপাল দাস এবং, অন্যদিকে, গ্রামের মানুষের ধর্মান্ধ বিশ্বাস। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মার্কসবাদে বিশ্বাসী। তাঁর এই উপন্যাস তৎকালীন গ্রামবাংলার সমাজকে মার্কসীয় দর্শনের নির্ভরতায় একটি বিশ্লেষণ। এই উপন্যাস প্রসঙ্গে লেখক তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, যাঁরা মানুষের জীবন নিয়ে এমনভাবে খেলতে থাকে যেন তাঁদের কাছে এক-একটি মানুষ মানে এক-একটি পুতুল, এই উপন্যাস তাঁদেরই বিরুদ্ধে একটি নম্র প্রতিবাদ।